রাজাকারদের ফাসি দাবির পাশাপাশি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মান জানিয়ে ব্যতিক্রমী বসন্ত উৎসব ও ভালবাসা দিবস পালন করুন :- তরুণদের প্রতি আহবান
প্রজন্ম চত্বর (শাহবাগ মোড়কে দেয়া নতুন নাম) এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ সকল তরুন-তরুণী, যুবক-যুবতী ‘বসন্ত উৎসব’ ও ‘ভালবাসা দিবস’ এ দু’টি দিন ব্যতিক্রমীভাবে পালন করুন সকল প্রকৃত ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সন্মান জানিয়ে। যেমন, ঢাকা শহরের ওয়াসার খালগুলোর পাশের বস্তিগুলোতে রয়েছে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা। তরুন-তরুণী, যুবক-যুবতী ‘বসন্ত উৎসব’ ও ‘ভালবাসা দিবস’ এ দু’টি দিনে খুঁজে নিয়ে আসুন ঐসব প্রকৃত ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে শাহবাগে বা শহীদ মিনারে। স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, প্রেমিক প্রেমিকাকে, প্রেমিকা প্রেমিককে, বন্ধু বান্ধবীকে, বান্ধবী বন্ধুকে যে টাকা খরচ করে উপহার দিতেন, দুই জনের টাকা একত্র করে কিনে দিন একজন দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে আপনাদের দু’জনের সামর্থ্যরে মধ্যে কোন একটা উপহার। দুটি মনের প্রেমের বা ভালবাসার গল্পের পরিবর্তে শুনুন না বাঙ্গালীর চেতনার জাগরনের দ্রোহের বহিঃপ্রকাশের ২০১৩ সালটিকে আপনাদের জীবনে আরো স্মরণীয় করে রাখতে একজন মুক্তিযোদ্ধার দেশকে ভালবাসার মাত্রার গভীরতা উপলদ্ধি করুন, শুনুন তাঁর জীবনের বীরত্বগাঁথা, শুনুন তাঁর জীবনের বঞ্চণার করুণ কাহিনী।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর হতে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব আর মুক্তিযোদ্ধাদের নিধন, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, লাঞ্চিত, নিগৃহীত, অবহেলা করা আর বিকৃত মানসিকতার দুষ্ট রাজনীতিক ও আমলাদের পরাজিত হিংস্রার নরপশুদেরকে পদলেহনের কালিমায় কলঙ্কিত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ যখন প্রত্যক্ষ করলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারি, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বারবার অস্বীকারকারি, আত্মস্বীকৃত হিংস্রার নরপশুর বিজয়চিহ্ন (ঠ) প্রদর্শন-ঠিক তখনই কয়েকজন (হয়তোবা ২০/২৫ জন) তরুণ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে দাঁড়ালো এসে শাহবাগ চত্বরে। ওরা শাহবাগকেই বেছে নিয়েছিল, কারন, এখানেই ঘোষলা হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ওরা জানতোনা বাড়ি ফিরে যেতে পারবে কিনা, নাকি কাটাবনভিত্তিক নরপশুদের রগকাটার শিকার হবে নাকি স্থান হবে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গ হয়ে আজিমপুর গোরস্থানে। ফেসবুকে, ট্যুইটারে, মোবাইলে একে অপরকে জানিয়ে তবুও ওরা এসেছিল, হৃদয়ের গভীরে অনেক কষ্ট, ক্ষোভ, বেদনা ও অভিমান নিয়ে-যাদের কেউ একে অপরকে আগে থেকে তেমন একটা চিনতোই না বা সামনাসামনি কেউ কেউ কাউকে দেখেওনি। তবে, তাদের সবারই হৃদয়ের একটি মনস্ত্রাত্বিক উপাদান, অর্থাৎ চেতনা ছিল এক, সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া-যার জন্য অপরিহার্য দেশটাকে রাজাকারমুক্ত করা। আর এর বহিঃপ্রকাশ তাঁরা দেখিয়ে আসছিলো আরো ৪/৫ বছর আগে থেকে ফেসবুকে, ট্যুইটারে, ব্লগে, বিভিন্নভাবে তাঁদের মতামত, চিন্তাগুলো প্রকাশের মাধ্যমে। ওরা সংগ্রহ করে আসছিলো দেশমাতৃকার জন্মের প্রকৃত ইতিহাস, বিনিময় করছিলো একে অপরের সাথে। যদিও রাষ্ট্র বা জনগন কেউই তাঁদের দায়িত্ব দেয়নি,-তবুও তাঁরা খুঁজছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটাকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, সেই পথ-তাই তো ওরা ছিল যেন তাদের পূর্বপূরুষদেও চেয়েও চেতনায় ও দেশপ্রেমে সমৃদ্ধ। ছিল তাঁদের অতি ক্ষুদ্র একটা নেটওয়ার্কও ছিল-যার নাম ব্লগার্স এন্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট-নেটওয়ার্ক (ইঙঅ-ঘ)। তাঁরা যে একটা প্রতিবাদ জানাতে শাহবাগে আসছে দু’একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল।
ওরা আসল, দেখল শাহবাগে নিয়মিত আড্ডা দেওয়া প্রানোচ্ছল হাসি মুখগুলোতে যেন বিষাদের ছায়া, সুর্যের আলোর দিপ্তীর মতো মুখগুলো যেন অমানিশার কালিমায় লেপন করা, যেন সবাই এক একটা মৃত লাশ। ওরা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কিছু বললো, এবং কেউ কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাঁড়িয়ে গেল, অনেকটা মানববন্ধনের মতোই, স্লোগান দিয়ে উঠল, “মানি না”, “ফাসি চাই”-রচিত হতে শুরু করলো বাংলাদেশের অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার ইতিহাস। এ যেন ১৯৪৮ সালের কায়েদে আজমের মুখের উপর বলে দেয়া “নো, নো”, যে দুটি শব্দ সাইকোনের মত ছড়িয়ে পড়েছিল, সমগ্র ঢাকা, আদমজী, ডেমরা, টঙ্গি, পরবর্তীতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান। শাহবাগে মলিন মুখে আড্ডারত একটি রায়ে মৃৎপ্রায় শ’পাঁচেক লাশও যাদুর কাঠির স্পর্শে যেন হঠাৎ প্রানশক্তি ফিরে পেল, উচ্চারিত হলো আরো একটু জোরে- “মানি না”, “ফাসি চাই”। আগুনের স্ফুলিঙ্গ হতে কিছুটা আলোর রশ্মি ও জাগরনের স্বর ছড়িয়ে গেল, পাবলিক লাইব্রেরী, চারুকলা হয়ে টিএসসি, বাংলা একাডেমির বইমেলা চত্বর। জীবন্ত লাশগুলো সব ছুটে আসতো লাগলো শাহবাগে, জীবন্ত লাশের সমাবেশ বাড়ার মতই স্লোগানেও শব্দ বাড়তে লাগলো একটি দু’টি করে, “এ রায় মানি না”, “সব রাজাকারের ফাসি চাই”। শিক্ষিত যুবক, তরুন, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে রিকশার চাকা বন্ধ করে দাড়িয়ে গেল রিকশাওয়ালা, মিরপুর মোহাম্মদপুর, সাভারের যেই অফিস ফেরৎ যাত্রীরা ভাবছিল, বাসায় ফিরে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মহত্যা করবে, চুড়ান্ত অপমানের জালা সইতে না পেরে আত্মহত্যাই করবে, নেমে গেল বাস হতে তরুনের সাথে গলার সমস্ত শক্তি এক করে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, “এ রায় মানি না”, “সব রাজাকারের ফাসি চাই”। যে বাস ড্রাইভার সমাবেশ দেখলেই অশালীন গালি দিয়ে দ্রুত পালায়, সেই বাস ড্রাইভারও সমাবেশের দিকে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, “ফাসি চাই”, টিএ্সসিতে সংস্কৃতি কর্মীরা মৃৎপ্রায় হয়ে ভাবছিল, কিইবা হতে পারে প্রতিবাদের ভাষা, শাহবাগ যেন অমোঘ বাঁশির সুরে সবাইকে ডেকে নিয়ে এল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন মনে মনে প্রস্তুত হচিছলেন মুনীর চৌধুরী হওয়ার, ঠিক তখনই শাহবাগের অমোঘ বাঁশির সুর তাদের টেনে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ফেরিওয়ালা, রিকশাওয়ালা, অফিস ফেরৎ বাসযাত্রী, সাবেক ছাত্র-ছাত্রী আর বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে এক কাতারে, মানবিক গুণাবলি বিকাশের শিক্ষা প্রদানকারি শিক্ষকও গগণবিদারি কন্ঠে বলে উঠলেন, “এ রায় মানি না”, “সব রাজাকারের ফাসি চাই”। ভাষার মাসের সমস্ত মর্যাদাকে কলুষিত করে নরপশুদের হাতে নির্মমভাবে মার খাওয়া পুলিশও স্তম্ভিত, যারা চাতরি ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছিল, তারাও যেন চিৎকার বলে উঠতে চাইছিল “এ রায় মানি না”, “সব রাজাকারের ফাসি চাই”; কিন্তু গায়ে থাকা ইউনিফর্ম তাকে বাধা দিলেও তার মন একাত্ম হয়ে গেল, মনে পড়ে গেল, এমনি তরুনরাই তো রাজারবাগ গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিল। সাইকোনের গতির চেয়েও তীব্র বেগে সারা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়লো এক অমোঘ জাদুর সুর “জয় বাংলা” আর সাথে ৩৭ বছরের মনের কোনে জমিয়ে রাখা সমস্ত ঘৃণা মিশ্রিত ক্ষোভ “তুই রাজাকার”। সাইকোনের জলের গতির মতো ছুটে আসছে মানুষ শাহবাগের মোহনায়-এ যেন সমগ্র জাতিকে এক সুতোয় বেধে ফেলার এক মহাশক্তি, মোবাইল, এসএমএস, এমএমএসের সাথে টিভির পর্দায়ও ভেসে উঠলো জাগরণের সুর। সারা দেশে ঘটে গেল এক মহা গণ-বিস্ফোরণ, আদালতের আইনী মারপ্যাচে জয়-পরাজয় যারই কোক না কেন, সমগ্র জাতি এক রাতে এক হয়ে একটি রায় দিয়ে দিয়েছে “সকল রজাকারের ফাসি চাই, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় রাজাকারের কোন ঠাই নাই”। বাঙ্গালী জাতির এই ঐতিহাসিক রায় পৃথিবীর কোন শক্তি আর পাল্টাতে পারবে না। আইন ও সংবিধান পাণ্টিয়ে হলেও এ রায় বাস্তবায়ন হবেই, প্রতিষ্ঠিত হবে রাজাকারমুক্ত ও মুক্তিযুদ্ধেে চেতনার এক সমৃদ্ধ উন্নত, সভ্য বাংলাদেশ, সমগ্র দুনিয়ার সেরা দেশ।
পরাজিত শক্তি ও তাদের চ্যালাচামুন্ডারা (যদিও অনেকে বলেন সমর্থনকারি) মরার আগে বাঁচার শেষ চেষ্টায় যতই প্রলাপ বকছে ও ষড়যন্ত্র করছে ততই মানুষ ফুঁসে উঠছে ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে শাহবাগে, দেশের সকল শহীদ মিনার ও বিজয় স্মৃতিস্তম্ভে সমবেত হয়ে। সবার একটাই পণ, সকল রাজাকারের ফাসি হয়ে বাংলাদেশ রাজাকারমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এক সূতোয় বাধা থাকবে সবাই। প্রতিদিনই নতুন গণ-বিস্ফোরণ মঞ্চ তৈরি হচ্ছে দেশের প্রতিটি জনপদে। সারা বিশ্ব আজ মহা বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে-যতই দাবিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র হোক না কেন, “বাঙ্গালী জাতিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না”। ৩০ লক্ষ শহীদ, দু’লক্ষ বীরাঙ্গনা জননীর আত্মার সাথে আজ জাতির পিতার আত্মাও যেন একটুখানি হলেও শান্তি পেয়েছে-আর এই অর্জনের বীর সমগ্র জাতি, কোন দল, সংগঠন বা গোষ্ঠী নয়।
এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেও যারা মৃত্যু ও পরাজিত হলে মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত জেনে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই ১৯৭৫-এর পর হতে বিভিন্ন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ভিটামাটি হারিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরের বস্তিতে বা বিভিন্ন গ্রামের গুচ্ছগ্রামে বা আশ্রায়ন কেন্দ্রে অবস্থান করে দিনমজুরি করে, রিকশা চালিয়ে, এমনকি ভিক্ষা করে জীবনযাপন করছে, রাষ্ট্র বা অন্য কেউ তাঁদের উপযুক্ত সন্মান জানানোর প্রয়োজনবোধ করছে না। এমতাবস্থায়, আজকের চেতনার মহাবিস্ফোরণ সৃষ্টিকারি যুবকদের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি প্রজন্ম চত্বর (শাহবাগ মোড়কে দেয়া নতুন নাম) এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ সকল তরুন-তরুণী, যুবক-যুবতী ‘বসন্ত উৎসব’ ও ‘ভালবাসা দিবস’ এ দু’টি দিন ব্যতিক্রমীভাবে পালন করুন সকল প্রকৃত ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সন্মান জানিয়ে। যেমন, ঢাকা শহরের ওয়াসার খালগুলোর পাশের বস্তিগুলোতে রয়েছে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা। তরুন-তরুণী, যুবক-যুবতী ‘বসন্ত উৎসব’ ও ‘ভালবাসা দিবস’ এ দু’টি দিনে খুঁজে নিয়ে আসুন ঐসব প্রকৃত ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে শাহবাগে বা শহীদ মিনারে। স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, প্রেমিক প্রেমিকাকে, প্রেমিকা প্রেমিককে, বন্ধু বান্ধবীকে, বান্ধবী বন্ধুকে যে টাকা খরচ করে উপহার দিতেন, দুই জনের টাকা একত্র করে কিনে দিন একজন দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে আপনাদের দু’জনের সামর্থ্যরে মধ্যে কোন একটা উপহার। দুটি মনের প্রেমের বা ভালবাসার গল্পের পরিবর্তে শুনুন না বাঙ্গালীর চেতনার জাগরনের দ্রোহের বহিঃপ্রকাশের ২০১৩ সালটিকে আপনাদের জীবনে আরো স্মরণীয় করে রাখতে একজন মুক্তিযোদ্ধার দেশকে ভালবাসার মাত্রার গভীরতা উপলদ্ধি করুন, শুনুন তাঁর জীবনের বীরত্বগাঁথা, শুনুন তাঁর জীবনের বঞ্চণার করুণ কাহিনী। দু’জন বা কয়েকজন মিলে তাকে স্যালুট করুন, যেসব মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে নিজ নিজ ভিটামাটি হতে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্র যন্ত্র ও অশুভ শক্তিগুলো ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরের বস্তিতে বা বিভিন্ন গ্রামের গুচ্ছগ্রামে বা আশ্রায়ন স্থান করে দিয়ে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করেছে। তরুনরা নতুন নতুন সৃষ্টিতে ও সৃষ্টির কৌশল উদ্ভাবনে আমাদের প্রবীনদের চেয়েও পারঙ্গম ও বিশ্বাস রেখেই শুধুই একটু মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়াসে এই লেখা। যদি তরুনদের মনে কিছুটা হলেও দাগ কাটে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাও যদি বাংলাদেশের তরুন-যুবকদের বিশেষ আবেগের এ দুটি দিনে সন্মানিত হন, তা হলে ১৯৮২-৯০ এর আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের একজন কর্মী হিসাবে নিজের মনে কিছুটা হলেও শান্তি পাব। আর এ ধরণের দু’চারটি ঘটনা সমগ্র জাতি ও রাষ্ট্রযন্ত্র একটি প্রশ্নের সম্মুখীন করবে, গত ৩৭ বছরে কতজন রাজাকারকে রাষ্ট্রযন্ত্র অবৈধভাবে পুরষ্কৃত করেছে, আর কতজন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে লাঞ্চিত ও নিগৃহীত করেছে। ওয়াসার খালের পাশে কতজন মুক্তিযোদ্ধাকে থাকতে দিয়ে অসন্মান করেছে, আর কতজন নরপশু রাজাকারকে আইনকানুন ফাকি দিয়ে এক নরপশুর ৪/৫ এমনকি ৮/১০ টি নাম দিয়ে ৪/৫ ৪/৫ এমনকি ৮/১০ টি প্লট দিয়েছে। এ ধরণের বহু অমীমাংসীত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বাধ্য করতে “প্রজন্ম চত্বর” টিকিয়ে রেখে সেখানে প্রতীকিভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে এ ধরণের আরো উদ্ভাবনী কৌশল তরুণ প্রজন্ম বের করতে সক্ষম হবে। যেভাবে তাঁরা নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে, সৃষ্টি করেছে সমগ্র বিশ্বকে কাপিয়ে দেয়া গণজাগরণের এক মহাবিস্ফোরণ।
লেখকঃ মোঃ মাহমুদ হাসান
ভ’তপূর্ব কলেজ অধ্যক্ষ ও সমাজ গবেষণা কর্মী
মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ ০৫:১১.............
প্রজন্ম চত্বর (শাহবাগ মোড়কে দেয়া নতুন নাম) এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ সকল তরুন-তরুণী, যুবক-যুবতী ‘বসন্ত উৎসব’ ও ‘ভালবাসা দিবস’ এ দু’টি দিন ব্যতিক্রমীভাবে পালন করুন সকল প্রকৃত ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সন্মান জানিয়ে। যেমন, ঢাকা শহরের ওয়াসার খালগুলোর পাশের বস্তিগুলোতে রয়েছে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা। তরুন-তরুণী, যুবক-যুবতী ‘বসন্ত উৎসব’ ও ‘ভালবাসা দিবস’ এ দু’টি দিনে খুঁজে নিয়ে আসুন ঐসব প্রকৃত ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে শাহবাগে বা শহীদ মিনারে। স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, প্রেমিক প্রেমিকাকে, প্রেমিকা প্রেমিককে, বন্ধু বান্ধবীকে, বান্ধবী বন্ধুকে যে টাকা খরচ করে উপহার দিতেন, দুই জনের টাকা একত্র করে কিনে দিন একজন দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে আপনাদের দু’জনের সামর্থ্যরে মধ্যে কোন একটা উপহার। দুটি মনের প্রেমের বা ভালবাসার গল্পের পরিবর্তে শুনুন না বাঙ্গালীর চেতনার জাগরনের দ্রোহের বহিঃপ্রকাশের ২০১৩ সালটিকে আপনাদের জীবনে আরো স্মরণীয় করে রাখতে একজন মুক্তিযোদ্ধার দেশকে ভালবাসার মাত্রার গভীরতা উপলদ্ধি করুন, শুনুন তাঁর জীবনের বীরত্বগাঁথা, শুনুন তাঁর জীবনের বঞ্চণার করুণ কাহিনী।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর হতে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব আর মুক্তিযোদ্ধাদের নিধন, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, লাঞ্চিত, নিগৃহীত, অবহেলা করা আর বিকৃত মানসিকতার দুষ্ট রাজনীতিক ও আমলাদের পরাজিত হিংস্রার নরপশুদেরকে পদলেহনের কালিমায় কলঙ্কিত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ যখন প্রত্যক্ষ করলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারি, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বারবার অস্বীকারকারি, আত্মস্বীকৃত হিংস্রার নরপশুর বিজয়চিহ্ন (ঠ) প্রদর্শন-ঠিক তখনই কয়েকজন (হয়তোবা ২০/২৫ জন) তরুণ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে দাঁড়ালো এসে শাহবাগ চত্বরে। ওরা শাহবাগকেই বেছে নিয়েছিল, কারন, এখানেই ঘোষলা হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ওরা জানতোনা বাড়ি ফিরে যেতে পারবে কিনা, নাকি কাটাবনভিত্তিক নরপশুদের রগকাটার শিকার হবে নাকি স্থান হবে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গ হয়ে আজিমপুর গোরস্থানে। ফেসবুকে, ট্যুইটারে, মোবাইলে একে অপরকে জানিয়ে তবুও ওরা এসেছিল, হৃদয়ের গভীরে অনেক কষ্ট, ক্ষোভ, বেদনা ও অভিমান নিয়ে-যাদের কেউ একে অপরকে আগে থেকে তেমন একটা চিনতোই না বা সামনাসামনি কেউ কেউ কাউকে দেখেওনি। তবে, তাদের সবারই হৃদয়ের একটি মনস্ত্রাত্বিক উপাদান, অর্থাৎ চেতনা ছিল এক, সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া-যার জন্য অপরিহার্য দেশটাকে রাজাকারমুক্ত করা। আর এর বহিঃপ্রকাশ তাঁরা দেখিয়ে আসছিলো আরো ৪/৫ বছর আগে থেকে ফেসবুকে, ট্যুইটারে, ব্লগে, বিভিন্নভাবে তাঁদের মতামত, চিন্তাগুলো প্রকাশের মাধ্যমে। ওরা সংগ্রহ করে আসছিলো দেশমাতৃকার জন্মের প্রকৃত ইতিহাস, বিনিময় করছিলো একে অপরের সাথে। যদিও রাষ্ট্র বা জনগন কেউই তাঁদের দায়িত্ব দেয়নি,-তবুও তাঁরা খুঁজছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটাকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, সেই পথ-তাই তো ওরা ছিল যেন তাদের পূর্বপূরুষদেও চেয়েও চেতনায় ও দেশপ্রেমে সমৃদ্ধ। ছিল তাঁদের অতি ক্ষুদ্র একটা নেটওয়ার্কও ছিল-যার নাম ব্লগার্স এন্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট-নেটওয়ার্ক (ইঙঅ-ঘ)। তাঁরা যে একটা প্রতিবাদ জানাতে শাহবাগে আসছে দু’একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল।
ওরা আসল, দেখল শাহবাগে নিয়মিত আড্ডা দেওয়া প্রানোচ্ছল হাসি মুখগুলোতে যেন বিষাদের ছায়া, সুর্যের আলোর দিপ্তীর মতো মুখগুলো যেন অমানিশার কালিমায় লেপন করা, যেন সবাই এক একটা মৃত লাশ। ওরা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কিছু বললো, এবং কেউ কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাঁড়িয়ে গেল, অনেকটা মানববন্ধনের মতোই, স্লোগান দিয়ে উঠল, “মানি না”, “ফাসি চাই”-রচিত হতে শুরু করলো বাংলাদেশের অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার ইতিহাস। এ যেন ১৯৪৮ সালের কায়েদে আজমের মুখের উপর বলে দেয়া “নো, নো”, যে দুটি শব্দ সাইকোনের মত ছড়িয়ে পড়েছিল, সমগ্র ঢাকা, আদমজী, ডেমরা, টঙ্গি, পরবর্তীতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান। শাহবাগে মলিন মুখে আড্ডারত একটি রায়ে মৃৎপ্রায় শ’পাঁচেক লাশও যাদুর কাঠির স্পর্শে যেন হঠাৎ প্রানশক্তি ফিরে পেল, উচ্চারিত হলো আরো একটু জোরে- “মানি না”, “ফাসি চাই”। আগুনের স্ফুলিঙ্গ হতে কিছুটা আলোর রশ্মি ও জাগরনের স্বর ছড়িয়ে গেল, পাবলিক লাইব্রেরী, চারুকলা হয়ে টিএসসি, বাংলা একাডেমির বইমেলা চত্বর। জীবন্ত লাশগুলো সব ছুটে আসতো লাগলো শাহবাগে, জীবন্ত লাশের সমাবেশ বাড়ার মতই স্লোগানেও শব্দ বাড়তে লাগলো একটি দু’টি করে, “এ রায় মানি না”, “সব রাজাকারের ফাসি চাই”। শিক্ষিত যুবক, তরুন, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে রিকশার চাকা বন্ধ করে দাড়িয়ে গেল রিকশাওয়ালা, মিরপুর মোহাম্মদপুর, সাভারের যেই অফিস ফেরৎ যাত্রীরা ভাবছিল, বাসায় ফিরে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মহত্যা করবে, চুড়ান্ত অপমানের জালা সইতে না পেরে আত্মহত্যাই করবে, নেমে গেল বাস হতে তরুনের সাথে গলার সমস্ত শক্তি এক করে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, “এ রায় মানি না”, “সব রাজাকারের ফাসি চাই”। যে বাস ড্রাইভার সমাবেশ দেখলেই অশালীন গালি দিয়ে দ্রুত পালায়, সেই বাস ড্রাইভারও সমাবেশের দিকে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, “ফাসি চাই”, টিএ্সসিতে সংস্কৃতি কর্মীরা মৃৎপ্রায় হয়ে ভাবছিল, কিইবা হতে পারে প্রতিবাদের ভাষা, শাহবাগ যেন অমোঘ বাঁশির সুরে সবাইকে ডেকে নিয়ে এল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন মনে মনে প্রস্তুত হচিছলেন মুনীর চৌধুরী হওয়ার, ঠিক তখনই শাহবাগের অমোঘ বাঁশির সুর তাদের টেনে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ফেরিওয়ালা, রিকশাওয়ালা, অফিস ফেরৎ বাসযাত্রী, সাবেক ছাত্র-ছাত্রী আর বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে এক কাতারে, মানবিক গুণাবলি বিকাশের শিক্ষা প্রদানকারি শিক্ষকও গগণবিদারি কন্ঠে বলে উঠলেন, “এ রায় মানি না”, “সব রাজাকারের ফাসি চাই”। ভাষার মাসের সমস্ত মর্যাদাকে কলুষিত করে নরপশুদের হাতে নির্মমভাবে মার খাওয়া পুলিশও স্তম্ভিত, যারা চাতরি ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছিল, তারাও যেন চিৎকার বলে উঠতে চাইছিল “এ রায় মানি না”, “সব রাজাকারের ফাসি চাই”; কিন্তু গায়ে থাকা ইউনিফর্ম তাকে বাধা দিলেও তার মন একাত্ম হয়ে গেল, মনে পড়ে গেল, এমনি তরুনরাই তো রাজারবাগ গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিল। সাইকোনের গতির চেয়েও তীব্র বেগে সারা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়লো এক অমোঘ জাদুর সুর “জয় বাংলা” আর সাথে ৩৭ বছরের মনের কোনে জমিয়ে রাখা সমস্ত ঘৃণা মিশ্রিত ক্ষোভ “তুই রাজাকার”। সাইকোনের জলের গতির মতো ছুটে আসছে মানুষ শাহবাগের মোহনায়-এ যেন সমগ্র জাতিকে এক সুতোয় বেধে ফেলার এক মহাশক্তি, মোবাইল, এসএমএস, এমএমএসের সাথে টিভির পর্দায়ও ভেসে উঠলো জাগরণের সুর। সারা দেশে ঘটে গেল এক মহা গণ-বিস্ফোরণ, আদালতের আইনী মারপ্যাচে জয়-পরাজয় যারই কোক না কেন, সমগ্র জাতি এক রাতে এক হয়ে একটি রায় দিয়ে দিয়েছে “সকল রজাকারের ফাসি চাই, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় রাজাকারের কোন ঠাই নাই”। বাঙ্গালী জাতির এই ঐতিহাসিক রায় পৃথিবীর কোন শক্তি আর পাল্টাতে পারবে না। আইন ও সংবিধান পাণ্টিয়ে হলেও এ রায় বাস্তবায়ন হবেই, প্রতিষ্ঠিত হবে রাজাকারমুক্ত ও মুক্তিযুদ্ধেে চেতনার এক সমৃদ্ধ উন্নত, সভ্য বাংলাদেশ, সমগ্র দুনিয়ার সেরা দেশ।
পরাজিত শক্তি ও তাদের চ্যালাচামুন্ডারা (যদিও অনেকে বলেন সমর্থনকারি) মরার আগে বাঁচার শেষ চেষ্টায় যতই প্রলাপ বকছে ও ষড়যন্ত্র করছে ততই মানুষ ফুঁসে উঠছে ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে শাহবাগে, দেশের সকল শহীদ মিনার ও বিজয় স্মৃতিস্তম্ভে সমবেত হয়ে। সবার একটাই পণ, সকল রাজাকারের ফাসি হয়ে বাংলাদেশ রাজাকারমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এক সূতোয় বাধা থাকবে সবাই। প্রতিদিনই নতুন গণ-বিস্ফোরণ মঞ্চ তৈরি হচ্ছে দেশের প্রতিটি জনপদে। সারা বিশ্ব আজ মহা বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে-যতই দাবিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র হোক না কেন, “বাঙ্গালী জাতিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না”। ৩০ লক্ষ শহীদ, দু’লক্ষ বীরাঙ্গনা জননীর আত্মার সাথে আজ জাতির পিতার আত্মাও যেন একটুখানি হলেও শান্তি পেয়েছে-আর এই অর্জনের বীর সমগ্র জাতি, কোন দল, সংগঠন বা গোষ্ঠী নয়।
এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেও যারা মৃত্যু ও পরাজিত হলে মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত জেনে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই ১৯৭৫-এর পর হতে বিভিন্ন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ভিটামাটি হারিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরের বস্তিতে বা বিভিন্ন গ্রামের গুচ্ছগ্রামে বা আশ্রায়ন কেন্দ্রে অবস্থান করে দিনমজুরি করে, রিকশা চালিয়ে, এমনকি ভিক্ষা করে জীবনযাপন করছে, রাষ্ট্র বা অন্য কেউ তাঁদের উপযুক্ত সন্মান জানানোর প্রয়োজনবোধ করছে না। এমতাবস্থায়, আজকের চেতনার মহাবিস্ফোরণ সৃষ্টিকারি যুবকদের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি প্রজন্ম চত্বর (শাহবাগ মোড়কে দেয়া নতুন নাম) এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ সকল তরুন-তরুণী, যুবক-যুবতী ‘বসন্ত উৎসব’ ও ‘ভালবাসা দিবস’ এ দু’টি দিন ব্যতিক্রমীভাবে পালন করুন সকল প্রকৃত ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সন্মান জানিয়ে। যেমন, ঢাকা শহরের ওয়াসার খালগুলোর পাশের বস্তিগুলোতে রয়েছে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা। তরুন-তরুণী, যুবক-যুবতী ‘বসন্ত উৎসব’ ও ‘ভালবাসা দিবস’ এ দু’টি দিনে খুঁজে নিয়ে আসুন ঐসব প্রকৃত ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে শাহবাগে বা শহীদ মিনারে। স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, প্রেমিক প্রেমিকাকে, প্রেমিকা প্রেমিককে, বন্ধু বান্ধবীকে, বান্ধবী বন্ধুকে যে টাকা খরচ করে উপহার দিতেন, দুই জনের টাকা একত্র করে কিনে দিন একজন দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে আপনাদের দু’জনের সামর্থ্যরে মধ্যে কোন একটা উপহার। দুটি মনের প্রেমের বা ভালবাসার গল্পের পরিবর্তে শুনুন না বাঙ্গালীর চেতনার জাগরনের দ্রোহের বহিঃপ্রকাশের ২০১৩ সালটিকে আপনাদের জীবনে আরো স্মরণীয় করে রাখতে একজন মুক্তিযোদ্ধার দেশকে ভালবাসার মাত্রার গভীরতা উপলদ্ধি করুন, শুনুন তাঁর জীবনের বীরত্বগাঁথা, শুনুন তাঁর জীবনের বঞ্চণার করুণ কাহিনী। দু’জন বা কয়েকজন মিলে তাকে স্যালুট করুন, যেসব মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে নিজ নিজ ভিটামাটি হতে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্র যন্ত্র ও অশুভ শক্তিগুলো ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরের বস্তিতে বা বিভিন্ন গ্রামের গুচ্ছগ্রামে বা আশ্রায়ন স্থান করে দিয়ে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করেছে। তরুনরা নতুন নতুন সৃষ্টিতে ও সৃষ্টির কৌশল উদ্ভাবনে আমাদের প্রবীনদের চেয়েও পারঙ্গম ও বিশ্বাস রেখেই শুধুই একটু মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়াসে এই লেখা। যদি তরুনদের মনে কিছুটা হলেও দাগ কাটে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাও যদি বাংলাদেশের তরুন-যুবকদের বিশেষ আবেগের এ দুটি দিনে সন্মানিত হন, তা হলে ১৯৮২-৯০ এর আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের একজন কর্মী হিসাবে নিজের মনে কিছুটা হলেও শান্তি পাব। আর এ ধরণের দু’চারটি ঘটনা সমগ্র জাতি ও রাষ্ট্রযন্ত্র একটি প্রশ্নের সম্মুখীন করবে, গত ৩৭ বছরে কতজন রাজাকারকে রাষ্ট্রযন্ত্র অবৈধভাবে পুরষ্কৃত করেছে, আর কতজন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে লাঞ্চিত ও নিগৃহীত করেছে। ওয়াসার খালের পাশে কতজন মুক্তিযোদ্ধাকে থাকতে দিয়ে অসন্মান করেছে, আর কতজন নরপশু রাজাকারকে আইনকানুন ফাকি দিয়ে এক নরপশুর ৪/৫ এমনকি ৮/১০ টি নাম দিয়ে ৪/৫ ৪/৫ এমনকি ৮/১০ টি প্লট দিয়েছে। এ ধরণের বহু অমীমাংসীত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বাধ্য করতে “প্রজন্ম চত্বর” টিকিয়ে রেখে সেখানে প্রতীকিভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে এ ধরণের আরো উদ্ভাবনী কৌশল তরুণ প্রজন্ম বের করতে সক্ষম হবে। যেভাবে তাঁরা নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে, সৃষ্টি করেছে সমগ্র বিশ্বকে কাপিয়ে দেয়া গণজাগরণের এক মহাবিস্ফোরণ।
লেখকঃ মোঃ মাহমুদ হাসান
ভ’তপূর্ব কলেজ অধ্যক্ষ ও সমাজ গবেষণা কর্মী
মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ ০৫:১১.............
No comments:
Post a Comment
Thank You........ For your feedback