গতকাল সন্ধ্যায় শাহবাগে একজন মধ্যবয়স্ক লোক আমাকে বলল ভাই আপনার মোবাইলটা একটু দিবেন বাসায় কল করব। কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে মোবাইলটা দিলাম। লোকটা ফোনে কথা বলছে আর আমি জাদুঘরের কর্ণারে দাঁড়িয়ে আছি। কথা শেষ করে ধন্যবাদ দিয়ে মোবাইলটা ফেরত দিল লোকটা। জানতে চাইলাম, আপনার মোবাইল কই? লোকটা পকেট থেকে তার সুন্দর মোবাইলটা বের করে দেখালো। বলল চারদিন ধরে এখানে আছি, মোবাইলে চার্জ নেই। এরপর আরো কথা বলতে ইচ্ছে করল। কথা বলে জানলাম ওনার বাড়ি ঠাকুরগাঁও, নাম রশিদ। মেয়ের সার্টিফিকেট সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য গিয়েছিলেন দিনাজপুর। ওখানেই সিদ্ধান্ত নেন সার্টিফিকেট সমস্যা সমাধান না করেই তিনি ঢাকা আসবেন। তাই দিনাজপুর থেকেই সোজা বাসে উঠে এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। শিক্ষাবোর্ডে দেবার জন্য যা কিছু টাকা নিয়ে এসেছিলেন তা দুইদিন আগেই শেষ। বাকি দুইদিন কি খেয়ে আছেন? নাহ, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে উনার কোন টেনশন নাই। জানার ইচ্ছে হল আপনি কেন এতদূর থেকে এখানে এসেছেন? যদিও জানি এই প্রশ্নটা করার কোন মানে নেই, সবাই নিজের বোধ থেকেই এসেছে। রশিদ ভাই বলল, আমার নিজের মন বলছে এখানে আসতে। না আসো পর্যন্ত কেমন ছটফট ছটফট লাগছিল। এখানে আশার পর মনটা চাঙ্গা হয়ে আছে। ফাঁসির রায় নিয়েই ঘরে ফিরব। আমার প্রশ্নে রশিদ ভাইয়ের সময় নষ্ট হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম। ফোনটা ব্যবহার করতে দিছেন দেইখা এত কিছু জানতে চাইতাছেন- এরকম প্রশ্নও হয়ত রশিদ ভাইয়ের মনের মধ্যে চলে আসছিল। যাইহোক, ওনার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছিল। বললাম চা খাবেন? রশিদ ভাই বলল খাবো। সামনে ফুলের দোকানের সামনে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিলাম। চা খাচ্ছি, রশিদ ভাই একটা বিস্কুটও নিলেন। হঠাৎ শাহবাগ থানার দিক থেকে একটা বিশাল মশাল মিছিল এগিয়ে এলো। চায়ের দোকানের কাছে মিছিলটা আসতেই রশিদ ভাই চায়ের কাপ রেখে দৌড়ে মিছিলে ঢুকে পড়ল, কণ্ঠে দীপ্ত স্লোগান ধরল:
ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই।
অদ্ভূত ভাললাগা নিয়ে অপলোক চেয়ে রইলাম রশিদ ভাইয়ের দিকে। রশিদ ভাই মিছিলে হারিয়ে গেলেন। বিশাল মিছিলের প্রত্যেকটা মানুষকে মনে হল এক একজন রশিদ ভাই।
ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই।
অদ্ভূত ভাললাগা নিয়ে অপলোক চেয়ে রইলাম রশিদ ভাইয়ের দিকে। রশিদ ভাই মিছিলে হারিয়ে গেলেন। বিশাল মিছিলের প্রত্যেকটা মানুষকে মনে হল এক একজন রশিদ ভাই।
No comments:
Post a Comment
Thank You........ For your feedback